মৃত সাগরের ইতিহাস কী ? | History of Dead Sea
মৃত সাগরের ইতিহাস কী ? | History of Dead Sea
হযরত লুত (আঃ) এর জাতি পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষে পৌছে যাওয়ার কারণে বিলাসিতার অতিশয্যে সীমালঙ্ঘনের দিক দিয়ে তাদের পূর্বের গযবপ্রাপ্ত জাতিগুলোকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ জাতি অবিচার তো করতোই, তার উপর সমকামিতার মত চরম সীমালঙ্ঘনও তারাই প্রথম শুরু করে, যা তাদের পূর্বে কেউ কখনো করে নি। উপরন্তু, তারা এর ফলে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হয়ে গর্ব করে তা সমাজে প্রকাশ করে বেড়াত এবং প্রকাশ্যে ও নির্লজ্জভাবে এসব নিষিদ্ধ কাজগুলো করত। আল্লাহ তাআলা তাই হযরত লুত (আঃ) কে তার জাতির জন্যে সতর্ককারী নবী মনোনীত করলেন এবং আল্লাহকে ভয় করে তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলার নির্দেশ দিলেন। হযরত লুত (আঃ) দীর্ঘ সময় ধরে সতর্ক করার পরও যখন তাদের পরিবর্তন হল না তখন আল্লাহ তাআলা চুড়ান্ত বিপর্যয়ের মাধ্যমে সমগ্র এলাকা উল্টিয়ে দেন, আকাশ থেকে একাধারে বৃষ্টি ও পাথর বর্ষণ করে সমগ্র জাতিকে সমুলে নিশ্চিহ্ন করে দেন। বর্ণিত আছে, বর্তমান মৃত সাগর বা ডেড সি হল হযরত লুত (আঃ) এর জাতির সেই বাসস্থান যেখানে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিলো।
ডেড সি একটি অতি লবণাক্ত পানি সমৃদ্ধ সাগর। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার (১,৩৭৮ ফিট) নিচে এটি পৃথিবীর নিম্নতম স্থলভূমি। এটির অবস্থান জর্ডানে। ইচ্ছা করলেও এ পানিতে ডুবা যায় না। সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত । সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি লেক যার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,২৪০ ফুট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে , মহাসাগরের পানির মহাসাগরের পানির চেয়ে মৃত সাগরের পানিতে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ সাগরে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। উচ্চ প্লবতার দরুন যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। এ হ্রদে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাঁচে না বলেই একে মৃত সাগর বলা হয়। সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায় এ সাগরে।
ডেড সি’র পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত। জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির প্রাকৃতিক আধার। এটি পৃথিবীর ৩১.২০ অক্ষাংশ ও ৩৫.২০ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ৭০,০০০ বছর পূর্ব থেকে ১২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত ডেড সি’র পানির উচ্চতা বর্তমান উচ্চতার চাইতে ১০০ থেকে ২৫০ মিটার বেশি ছিল। ২৬,০০০ বছর পূর্বে এটির পানি সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে। প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে এর পৃষ্ঠ উচ্চতা হ্রাস পেতে শুরু করে, যা সম্ভবত বর্তমান পৃষ্ঠ উচ্চতার চাইতেও অনেক কম ছিল।
মৃত সাগর, যা ডেড সি নামেও পরিচিত, পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত জলাশয়গুলির মধ্যে একটি। এটি জর্ডান, ইসরায়েল এবং পশ্চিম তীরের মধ্যে অবস্থিত। মৃত সাগরের ইতিহাস প্রায় তিরিশ লক্ষ বছর পূর্বে শুরু হয়, যখন বর্তমান জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের পানিতে বারবার প্লাবিত হত । মৃত সাগরের নামকরণ হয়েছে এর উচ্চ লবণাক্ততার কারণে, যা প্রায় ৩০%। এই লবণাক্ততার কারণে এখানে কোনো জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না, তাই একে “মৃত” সাগর বলা হয়। এই সাগরটি হযরত লুত (আঃ) এর জাতির ধ্বংসের স্থান হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে, মৃত সাগর একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং এর খনিজ সমৃদ্ধ পানির জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডেড সী বা মৃত সাগর কে মৃত বলা হয় কেন?
কারন এ সাগরে কোন মাছ বা জলজ প্রানি বাঁচে না। কেবল কিছু ব্যক্টরিয়া ও ছত্রাক জাতীয় অনুজীব
পাওয়া যায়। এ জন্যই একে মৃত সাগর বলে।
ডেড সী বা মৃত সাগরে কোন মানুষ ডুবে যায় না কেন?
সবাই জানে ডেড সী বা মৃত সাগরে কোন মানুষ ডুবে যায় না। কারন কি তা জানেন?
কারণ হল মৃত সাগরে পানির ঘনত্ত্ব খুব বেশি। পানির ঘনত্ত্ব বেশির কারন হচ্ছে লবণ। অন্যান্য মহা সাগরে লবণের পরিমান শতকরা ৫% – ৬%। কিন্তু এ মৃত সাগরে লবনের পরিমান ২৫% – ৩০%। তাছাড়া এর লবনাক্ততা স্বাভাবিক সাগরের থেকে ৮.৬ গুন বেশি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার(১,৩৭৮ ফিট) নিচে এটি পৃথিবীর নিম্নতম স্থলভূমি । সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি লেক যার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,২৪০ ফুট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জর্দান ও ইসরাঈলের মধ্যখানে অবস্থিত। উল্লেখ্য, এই জায়গায় লুত (আ:)এর জাতি বাস করত। তাদের মাঝে সমকামিতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। লুত (আ:) তাদেরকে এ জঘন্য কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেও কোন ফল আসে নি। ফলে মহান আল্লাহর হুকুমে তাদের এলাকা উল্টিয়ে দেয়া হয়। এতে সেখানে একটি সাগরের সৃষ্টি হয়। আর এটিই বর্তমানে মৃত সাগর বা Dead Sea বলা হয়।
মহান আল্লাহ পাক এটি করে দিয়েছেন এ জন্য যে যাতে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর সকল মানুষ এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
COMMENTS