দিনলিপি লেখার নিয়ম | ৬ষ্ঠ , সপ্তম ,অষ্টম,নবম , দশম , এইচএসসি
দিনলিপি কী?
দিনলিপি হলো একটি ব্যক্তিগত লেখা যাতে আপনি আপনার দৈনিক অভিজ্ঞতা, ভাবনা, ঘটনা, সংকট, সুখ, দু: খ, স্মৃতি, স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা, প্রেম, বিশ্বাস, আপনার জীবনের ঘটনাগুলি লিখতে পারেন। দিনলিপি লেখার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের ভাবনা এবং অভিজ্ঞতা সাঝা করতে পারেন এবং সময়ের সাথে তা পুনরায় পড়তে পারেন।
দিনলিপি লিখন কি?
দিনলিপি লেখার নিয়ম :
প্রথম পাতা:
- দিনলিপির প্রথম পাতার উপরের ডান বা বাম পাশে তারিখ ও বারের নাম লিখতে হবে।
- এটি দিনলিপির মৌখিক সম্পর্কে আপনার পরীক্ষার পরিক্ষার অফিসারের কাছে সহায়ক হতে পারে।
সঠিক ভাষা ও শৈলী:
- দিনলিপি লেখার সময় সঠিক বাংলা ভাষা ব্যবহার করুন।
- স্পষ্ট, সংক্ষেপণীয় এবং সুন্দর ভাষায় লেখা যাক।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
- দিনলিপি লেখার সময় আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অনুভব লেখা যাক।
- আপনার ভাবনা, অবস্থা এবং ঘটনাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে পারেন।
এই নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করে দিনলিপি লেখার প্রক্রিয়া শুরু করুন!
এইচএসসি দিনলিপি লেখার নিয়ম
১. দিনলিপির পৃষ্ঠার একেবারে উপরের ডান বা বাম পাশের তারিখ ও বারের নাম লিখতে হয়। কেননা এর মাধ্যমে বোঝা যায় ঘটনাটি কত তারিখে এবং কি বারে ঘটেছিল।
২. দিনলিপিতে ঘটনার সময় ও স্থানের নাম লিখতে হবে এর মাধ্যমে ঘটনাটির সময় ও স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
৩. দিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা এর বিস্তারিত বিবরণ নয়, বরং উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৪. দিনলিপিতে সহজ, সরল, স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ ভাষায় কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোন বিশেষ ভাবনা চিন্তা বা কৌতূহলজনক কিছু লিখে রাখা হয়।
৫. দিনলিপিতে নিজের বা উত্তম পুরুষ (আমি, আমরা) লেখা হয়।
৬. দিনলিপিতে সাধারণত কোন অনুষ্ঠান, কোন বিপর্যয়, কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কোন বিশেষ ভাবনাচিন্তা বা কৌতূহলজনক কিছু লিখে রাখা হয়।
৭. দিনলিপির ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত চরিত্রগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।
৮. দিনলিপিতে লেখক এর বর্ণনা বা বিবরণ গোছালো ও পরিচ্ছন্ন লেখা হওয়া উচিত।
৯. দিনলিপি একান্ত ব্যক্তিগত রচনাবলী। এতে নিজস্ব অভিমত দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ইত্যাদি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা চলে।
১০. দিনলিপিতে সব সময় সত্য ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।
এইচএসসি পরীক্ষা উপযোগি কিছু দিনলিপি
১. একজন শিক্ষাবিদের দিনলিপি
মে , ২০২৪
ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। পত্রিকা পড়া এবং চা খাওয়া শেষ করে যথারীতি ৭টায় পড়তে বসলাম। ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার দু’শো বছর’ বই থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘শিক্ষার লক্ষ্য’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘লোক শিক্ষা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ’, প্রমথ চৌধুরীর ‘আমাদের শিক্ষা ও বর্তমান জীবন সমস্যা’ চারটি প্রবন্ধ পড়লাম। আমার এ পড়া নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন পড়ি? মনে মনে বলি, না পড়ে লিখব কী করে?
বই পড়ে যেমন নিজেকে জানতে পারি, তেমনি জানতে পারি অন্যকে, জানতে পারি চারপাশের পরিবেশ আর প্রকৃতিকে। এ জানা চাক্ষুষ জানা নয়— মন দিয়ে, হৃদয় দিয়ে জানা। আত্মার পরিব্রজনে বই আমার একই সঙ্গে পথ ও পাথেয়। আজও সকাল ১০টায় কলেজে গেলাম। পর পর তিনটি ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। ‘কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব’ বিষয়ক প্রবন্ধ লেখার জন্য কিছু বিষয় নোট করলাম।
আমার মনে হলো কাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টি কোনোকালেই খুব স্বচ্ছ ছিল না; ফলে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতিও আমাদের দৃষ্টি খুব স্বচ্ছ নয়। দেশে কৃষি ছাড়া যদি শিল্পেরও বড় ধরনের কোনো বিকাশ ঘটত, বিশেষ করে সেগুলো যদি দেশজ কাঁচামাল, শ্রম, প্রজ্ঞা ব্যবহারের ওপর জোর দিত, তবে এই কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন সর্বত্র অনুভূত হতো। ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটি সুফল বয়ে আনত। কর্মমুখী মানুষ হাতাশায় ভোগে না; সমাজের উন্নতিকল্পে এদের বিকল্প নেই।
শিক্ষার সঙ্গে জীবন ও পরিবেশের যোগাযোগ রক্ষা করা দরকার। না হলে শিক্ষা অর্থবহ হয়ে উঠবে না। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ থেকে ‘ডিগ্রির অভিশাপ’ পড়লাম। ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা’ প্রবন্ধ লিখলাম। রাতে খাবার খেয়ে পরবর্তী দিনের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় নোট লিখলাম। আমার কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম।
২. একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার দিনলিপি
৩ জুন , ২০২৩
ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। সকাল ৭টা ৩০-এর মধ্যেই কম্পিউটারের মেইল চেক করে আপডেট করলাম। ব্যবসায় উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ২টি আর্টিকেল পড়লাম। মুনাফা বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাস বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের বিভিন্ন বিভাগ-উপবিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কয়েকটি সূত্র লিখলাম।
পরিমিত ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে সমাজ ও জাতিকে নতুন পণ্য উপহার দেওয়া যায়, এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা করলাম। আমার প্রতিষ্ঠানের জনবল বাড়ানো উচিত কিনা— এ বিষয়ে সমমানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। আমার প্রতিষ্ঠানের নতুন শাখার জন্য স্থান নির্ধারণ, বাজার ও চাহিদা নির্ধারণ করলাম। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভোক্তার চাহিদা সম্পর্কে গবেষণার একটি ছক করলাম। পণ্যের উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে যথার্থ নীতি অনুসরণ বিষয়ে কোনো সমস্যা, জটিলতা আছে কিনা তা যাচাই করলাম।
৩. কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের দিনলিপি
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
কক্সবাজার ভ্রমণে আজ দ্বিতীয় দিন। প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত কক্সবাজার জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান। দু’দিনে এখানকার সব দর্শনীয় স্থান দেখা সম্ভব নয়। কক্সবাজারের স্থানীয় ছেলে আমার বন্ধু রিয়াদ সঙ্গে ছিল বলে অল্প সময়ে এখানকার প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান দেখা সম্ভব হলো। গতকাল সকালে গেলাম সমুদ্রগর্ভে অবস্থিত মনোরম দ্বীপ সেন্টমার্টিন এ।
এর পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে ১০-১৫ কি.মি. প্রবাল প্রাচীর। প্রায় ১৬ বর্গ কি.মি. জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা দেখে মুগ্ধ চোখ নিয়ে গেলাম ছেড়া দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত ভূখন্ড। মূল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে এটি বিচ্ছিন্ন বা ছিঁড়ে যায় বলে এর নাম ছেড়া দ্বীপ। এ দ্বীপের চারদিকের জল বড় স্বচ্ছ। ফলে জলের অনেক গভীরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, প্রবাল ও সামুদ্রিক শৈবাল খালি চোখে দেখতে পেলাম।
আরও দেখছি কক্সবাজার শহর থেকে ৯কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি ঝরনা। আজ দেখলাম মহেশখালীর ‘সোনাদিয়া’ দ্বীপ। দ্বীপটি সোনার মতো মূল্যবান সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল বলে এর নাম সোনাদিয়া বা স্বর্ণবসতি। সবচেয়ে ভালো লাগল চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক দেখে। ৯০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে সংরক্ষিত বনভূমি ও বন্য জীবজন্তুর অভয়ারণ্য এটি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফিরে ইনানী সি বিচে এলাম। এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে আমি কী যে আনন্দ পেলাম,তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। সময় স্বল্পতার জন্য পাতাবাড়ী বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পাড়া,চিংড়ি রপ্তানি জোন, রামকোর্ট বৌদ্ধবিহার প্রভৃতি সুন্দর স্থান দেখা হলো না।
৪. অসুস্থ বন্ধুকে/সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বন্ধুকে দেখতে যাওয়ার দিনলিপি
১৮মার্চ, ২০২৩
আজ সকালে অয়ন ও রূপমকে সঙ্গে নিয়ে সুজিতকে দেখতে গেলাম। সুজিত আমাদের সহপাঠী বন্ধু। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সুজিত পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। আমাদের কলেজের সবচেয়ে মেধাবী,সুদর্শন,নম্র,ভদ্র ছেলে সুজিত। ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্কুলজীবন থেকেই তার সুনাম। ঘাতক ট্রাক সেই সুজিতের একটি পা কেড়ে নিয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল সুজিতের মুখটি বিবর্ণ, ফেকাসে, প্রচন্ড ম্লান হয়ে গেছে। দেখলে বন্ধু বলে নয়, যেকোনো হৃদয়বান মানুষের চোখে জল আসবে। অয়ন সহ্য করতে পারল না,মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগল।
আমি আর রূপম নির্বাক প্রস্তুর ফলকের মতো নিস্পন্দ হয়ে আছি। সুজিতে ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে আমাদের দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিছানা ছেড়ে হঠাৎ উঠতে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কাছে হার মানল। আমরা তাকে উঠতে বসতে সাহায্য করলাম। সুজিত আমার নোটবুকটি হাতে নিয়ে কলম চাইল। কলম নিয়ে নোটবুকের এক জায়গায় লিখল- আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের সবসয় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সুজিতের এ মবোবলকে আরও বাড়িয়ে দিল।
৫. বৈশাখী মেলা’ শিরোনামে দিনলিপি
১০ এপ্রিল,২০২০
ঘিউর, মানিকগঞ্জ।
বৈশাখ মেলা আমাকে খুব কাছে টানে। এর মধ্যে আমি যেন শেকড়ের সন্ধান পাই। আবহমান বাঙালি ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। তাই আমি প্রতিবছরই ছুটে যাই আমার গ্রামে। আর মেলার জন্য মাটির ব্যাংকে টাকা জমাই। যা দিয়ে চাচাত ভাই বোনদের নিয়ে বেশ আনন্দে কাটানো যায়। এবার মেলার আগের দিন চলে এসেছি। আমাকে পেয়ে ওদের মনে খুশির বান এলো। কে কী করবে, কে কী কিনবে তাই নিয়ে হৈচৈ আর জল্পনা কল্পনা।
গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ডেকে তুললাম। হুড়মুড় করে উঠে সবাই ঝটপট তৈরি হয়ে নিল। এক টেম্পোএ উঠে সবাই একসঙ্গে নামলাম মেলাস্থলে। শুরুতেই বাঁশিওয়ালার উদাস করা সুর। সৈকত বাজিয়ে দেখে একটা বাঁশি কিনল পছন্দ করে। তারপর নাগরদোলা,কেউ উঠল না। কারণ গত বছর কিসলু পড়ে গিয়েছিল। সামনেই মিষ্টির দোকান। গরম গরম জিলাপি আর রসগোল্লা খেল সবাই। ঐশী আর বাবলি চুড়ি কিনল হরেক রকম। মিন্টু আর রিন্টু কিনল মাটির ঘোড়া, হাতি, বউ আর মাটির ব্যাংক।
তাপস পছন্দ করল মাটির চমৎকার একটা ফুলদানি। ডানপাশে বাঁশ আর বেতের তৈরি নানা তৈজসপত্র সাজানো। বামপাশে লোহার তৈরি দা, কুড়াল, কোদাল, খুন্তি, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহারিক জিনিসপত্র বেচাকেনা হচ্ছে। আরও সামনে কাচের নানা রকম জিনিস সাজানো। পাশেই কাঠের তৈরি নানা সামগ্রী। এরপরে আছে শরবত আর ফলের দোকান। বেলুনের দোকানগুলো থেকে একগাদা নানা রঙের বেলুন কিনল মিন্টু রিন্টু। ক্ষুধা পেয়েছে। অথচ পরোটা মিষ্টি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার উপায় নেই। তাই খেলাম সবাই। বেরিয়ে এসে লাঠিখেলা দেখলাম এক পর্ব। লটারি ধরলাম, কিন্তু পেলাম না। মন খারাপ হলো। দেখলাম বানরের নাচ। তারপর টেম্পোতে করে সোজা বাড়ি ফিরে এলাম।
COMMENTS